বই -আমার ফাঁসির ইচ্ছে
⭐
আমার ফাঁসির ইচ্ছে | বইটি রাব্বি সরকার রচিত, যা ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির অডিও সংস্করণটি শোনা যাবে কাঁটা কম্পাসের ইউটিউব চ্যানেলে।
| প্রথম অধ্যায়: শৈশব ও পরিবার
আমার শৈশব শুরু হয়েছিল নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার এক ছোট্ট গ্রামে। গ্রামের জীবন ছিল শান্ত, তবে এর মধ্যেই লুকিয়ে ছিল নানা গল্প। আমাদের বাড়ির চারপাশে ছিল সবুজ ধানক্ষেত, কাঁচা রাস্তা, আর গ্রামের সেই পরিচিত নিস্তব্ধ পরিবেশ। আমার জীবনের প্রথম দিনগুলো কেটেছে এই পরিবেশের স্নিগ্ধতায়।
আমার শৈশবের প্রতিটি দিন ছিল যেন এক নতুন অভিযান। আমরা পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মাঠে খেলতাম, নদীতে সাঁতার কাটতাম, আর বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে খেতাম। সেসব দিনে কোনো চিন্তা ছিল না, ছিল শুধু হাসি আর আনন্দ।
আমার দাদু ছিলেন আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তার কাছ থেকে অনেক গল্প শুনতাম, যা আমাকে জীবনের বিভিন্ন দিক বুঝতে সাহায্য করেছে। দাদুর গল্পগুলো ছিল শিকড়ের মতো—আমাকে মাটির কাছাকাছি রাখতে শিখিয়েছে।
আমার পরিবার ছিল একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী , যিনি দিন-রাত খেটে আমাদের পরিবারের চাহিদা পূরণ করতেন। মা ছিলেন আমাদের পরিবারের মূল স্তম্ভ, যিনি সবার দেখাশোনা করতেন এবং সংসারের প্রতিটি কাজ দক্ষতার সঙ্গে সামলাতেন।
আমার মা-বাবার মধ্যে একটি সুন্দর বন্ধন ছিল, যা আমাদের পরিবারকে ভালোবাসার ছায়ায় রেখেছিল।
আমি আমার পড়াশোনা শুরু করি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানকার শিক্ষকরা ছিলেন খুব যত্নশীল। তারা শুধু পড়াশোনা শেখাতেন না, আমাদের জীবনের নীতি ও আদর্শ শেখাতেন।
প্রথম দিন স্কুলে যাওয়ার কথা এখনও মনে পড়ে। নতুন বই-খাতা আর পিঠে ঝুলানো ব্যাগ নিয়ে যখন স্কুলে গিয়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল আমি এক নতুন পৃথিবীতে পা রাখছি। স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়ানো, শিক্ষক থেকে কখনো বকুনি খাওয়া, আবার কখনো পুরস্কার পাওয়া—এসব আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।
শিক্ষার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মায় খুব ছোটবেলায়। আমার মা ছিলেন আমার প্রথম শিক্ষক। তিনি আমাকে অক্ষর চিনিয়েছিলেন এবং জীবনের প্রথম পাঠ দিয়েছিলেন। তার অনুপ্রেরণায় আমি পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি।
শৈশবের সেই দিনগুলো আমাকে এখনো প্রেরণা দেয়। সেই ছোট ছোট স্মৃতিগুলোই আমার বর্তমান জীবনের ভিত্তি তৈরি করেছে। এখনো ভাবি, যদি আবার সেই দিনগুলো ফিরে পেতাম, তবে হয়তো আর কিছুই চাইতাম না।
দ্বিতীয় অধ্যায়: কৈশোরের সন্ধিক্ষণ
কৈশোর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে মানুষ তার শৈশবের সীমানা ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে জ্ঞানের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করে। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। জীবনের প্রতিটি পরিবর্তন, প্রতিটি ঘটনা আমাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে, আমাকে আরও পরিণত করেছে।
জীবনের প্রথম বড় পরিবর্তন
আমার জীবনের প্রথম বড় পরিবর্তন আসে যখন আমি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। গ্রামের ছোট্ট পরিবেশ থেকে একটি বড় স্কুলে যাওয়া, নতুন শিক্ষক, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ছিল আমার জন্য একটি বিশাল পরিবর্তন।
তবে এই পরিবর্তন শুধু পরিবেশগত নয়, মানসিকভাবেও আমি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলাম। জীবনের দায়িত্ববোধ অনুভব করতে শুরু করেছিলাম। বাবা-মার সংগ্রামকে আরও গভীরভাবে বুঝতে শিখেছিলাম। স্কুলে পড়ার পাশাপাশি আমি বাবার কৃষিকাজে সাহায্য করতাম। এই পরিবর্তনগুলো আমাকে বাস্তব জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।
রাজনৈতিক চিন্তা শুরু হওয়ার পটভূমি
আমার রাজনৈতিক চিন্তার শুরুটা খুব স্বাভাবিকভাবেই হয়েছিল। বাবা ছিলেন একজন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি। তার মুখে প্রায়ই দেশ, স্বাধীনতা, এবং ন্যায়ের কথা শুনতাম। সেসব কথা আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
তবে সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক চিন্তার প্রতি আমার আকর্ষণ শুরু হয় যখন আমি স্থানীয় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিই। সেখানে বক্তারা দেশের অবস্থা, জনগণের অধিকার এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তাদের কথাগুলো আমাকে ভীষণ নাড়া দেয়।
এক পর্যায়ে আমি বুঝতে পারি, দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা এবং মানুষের অধিকার রক্ষার তাগিদ আমাকে রাজনীতির পথে টেনে আনছে। ধীরে ধীরে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হই। তাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, এবং ন্যায়বিচার নিয়ে অবস্থান আমার মনে একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করে।
জীবনের প্রথম বড় দুঃখ আসে যখন আমার প্রিয় দাদু আমাদের ছেড়ে চলে যান। তার মৃত্যু আমাকে ভীষণ ভেঙে দিয়েছিল। আমি তার থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। তার অনুপস্থিতি অনুভব করে আমি বুঝেছিলাম, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কত মূল্যবান।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জের কথা মনে পড়ে, যখন স্থানীয় এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে কিছু মানুষের বিরোধিতার মুখে পড়ি। তারা আমাকে অপমান করে এবং আমার সাহসকে চ্যালেঞ্জ জানায়। সেদিন আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম, তবে সেই ঘটনা আমাকে আরও শক্ত করে তোলে।
এছাড়াও, আর্থিক সীমাবদ্ধতা সবসময়ই আমার পরিবারের একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে বাবা-মার অক্লান্ত পরিশ্রম ও অনুপ্রেরণা আমাকে সবসময় এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
কৈশোরের এই সন্ধিক্ষণ আমাকে জীবনের নানা দিক চিনতে, কঠিন সময় মোকাবিলা করতে এবং মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা জাগ্রত করতে সাহায্য করেছে। এসব অভিজ্ঞতা আমার জীবনের ভিত্তি তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতে আমাকে আরও বড় চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত করেছে।
তৃতীয় অধ্যায়: রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ
রাজনীতির প্রতি আমার আকর্ষণ শুরু হয় কৈশোরেই, যখন আমি চারপাশের সমাজ এবং দেশের বাস্তব চিত্র সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, এবং ন্যায়বিচারের অভাব আমাকে ভাবিয়ে তুলত। এই ভাবনা থেকেই ধীরে ধীরে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
কিভাবে ও কেন রাজনীতিতে যুক্ত হইলাম
রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পেছনে আমার পরিবারের প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাবা ছিলেন একজন সচেতন নাগরিক, যিনি নিয়মিত জাতীয় এবং স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতেন। তার কথাগুলো শুনে আমার মধ্যে রাজনীতি সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হয়।
তবে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আসে যখন স্থানীয় একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিই। সেখানে আমি দলীয় নেতাদের কাছ থেকে রাজনীতির বাস্তব শিক্ষা পাই। তাদের সাহসিকতা, নেতৃত্ব এবং মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা আমাকে উদ্বুদ্ধ করে।
রাজনীতি আমার কাছে ছিল শুধু ক্ষমতার খেলা নয়; বরং মানুষের জন্য কিছু করার একটি সুযোগ। আমি বিশ্বাস করি, সঠিক নেতৃত্ব এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের পরিবর্তন সম্ভব। এই বিশ্বাস থেকেই আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করি।
বিএনপি-র প্রতি আপনার সমর্থনের কারণ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র প্রতি আমার সমর্থনের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, আমি বিশ্বাস করি এই দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা, গণতন্ত্র এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। বিএনপি সবসময় মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলে এবং একটি শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী অবস্থান বজায় রাখে। জিয়াউর রহমানের অবদান আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তার নেতৃত্বগুণ, নীতিনিষ্ঠতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা বিএনপি-কে আমার কাছে একটি আদর্শ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তুলে ধরে।
এছাড়া, বিএনপি-র গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি আমার সমর্থনের মূল ভিত্তি।
প্রথম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা
আমার প্রথম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল স্থানীয় একটি সমাবেশে। সেই দিনটি ছিল আমার জন্য একটি স্মরণীয় অধ্যায়। সমাবেশে আমি প্রথমবার দলের সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকে বক্তৃতা শুনি এবং তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই।
এরপর আমি একটি ছোট্ট দলের হয়ে পোস্টার লাগানো, কর্মসূচির পরিকল্পনা করা এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ শুরু করি। একবার আমাদের দলের একটি মিটিং চলাকালীন বিরোধী দলের লোকেরা আমাদের বাধা দেয়। সেই পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে আমি বুঝতে পারি রাজনীতিতে সাহস এবং কৌশল দুটোই জরুরি।
প্রথমবার যখন স্থানীয় একটি বিক্ষোভে অংশ নিই, তখন পুলিশের বাধার মুখেও আমি পিছু হটিনি। সেদিন আমার সাহসিকতাকে দলের নেতারা প্রশংসা করেছিলেন। সেই মুহূর্তে আমি বুঝেছিলাম, মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা থাকলে অনেক বাধা জয় করা সম্ভব।
রাজনীতিতে আমার যাত্রা শুরু হয় ছোট কাজ দিয়ে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা একটি গভীর দায়িত্ববোধে রূপ নেয়। বিএনপি-র সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি শিখেছি কীভাবে মানুষের জন্য লড়াই করতে হয় এবং কীভাবে একটি আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হয়।
চতুর্থ অধ্যায়: রাজনীতিতে সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জ
রাজনীতির পথে হাঁটা কখনোই সহজ ছিল না। ছোট্ট গ্রাম থেকে শুরু করে একটি দলের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠা পর্যন্ত আমার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সংগ্রামের দৃষ্টান্ত। রাজনীতিতে আসার পর থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, এখানে কাজ করতে গেলে শুধু ইচ্ছাশক্তি নয়, দরকার অসীম সাহস, ধৈর্য, এবং দৃঢ় সংকল্প। আমার এই পথচলায় অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে, কিন্তু প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমাকে নতুন করে লড়াই করার শক্তি দিয়েছে।
প্রথম বাধা: পরিবারের দ্বিধা
যখন আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করি, তখন প্রথম বাধা আসে আমার পরিবার থেকেই। আমার বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি পড়াশোনায় মনোযোগ দিই এবং সাধারণ জীবনযাপন করি। তারা রাজনীতিকে একটি অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক পথ হিসেবে দেখতেন।
বাবার সঙ্গে আমার বহুবার এই নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। তিনি বলতেন, “তুমি যদি মানুষের জন্য কিছু করতে চাও, তবে সেটা অন্যভাবে করো। রাজনীতির পথ অনেক কঠিন। এখানে সত্যিকারের সৎ মানুষ টিকে থাকতে পারে না।”
তবে আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে রাজনীতির মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর আমার মা-বাবা রাজি হন, যদিও তারা এখনও আমার জন্য চিন্তিত থাকেন।
প্রতিপক্ষের হুমকি ও সংঘাত
স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে কাজ করতে গিয়ে অনেকবার বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে হয়েছে। বিশেষ করে, যখন বিএনপি-র জন্য প্রচার চালানো শুরু করি, তখন কিছু মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে শারীরিক এবং মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করে।
একবার, স্থানীয় একটি নির্বাচনের সময়, পোস্টার লাগাতে গিয়ে আমরা বিরোধী দলের কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হই। সেদিন তারা আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমাদের দল ঐক্যবদ্ধ ছিল। আমরা পিছু হটিনি। সেই ঘটনা আমাকে শিখিয়েছে, রাজনীতিতে সাহসিকতা এবং সংগঠনের শক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা
রাজনীতি করতে গেলে অর্থনৈতিক সমস্যাও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমি এমন একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি, যেখানে প্রত্যেক পয়সার হিসাব করে চলতে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে গেলে অনেক খরচ হয়—সমাবেশে যাতায়াত, পোস্টার ছাপানো, এমনকি কর্মীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা।
আমার বাবার কষ্টার্জিত টাকা আমি কখনো এভাবে খরচ করতে চাইনি, তাই নিজেই ছোটখাটো কাজ করে কিছু অর্থ জোগাড় করার চেষ্টা করেছি। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা আমার এই প্রচেষ্টাকে দেখে আমাকে উৎসাহ দেন এবং আর্থিকভাবে কিছুটা সহায়তা করেন।
মানসিক চাপ ও একাকিত্ব
রাজনীতির চ্যালেঞ্জ শুধু বাহ্যিক ছিল না; এর মানসিক দিকও ছিল অত্যন্ত জটিল। অনেক সময় এমন হয়েছে যে, নিজের দলের কিছু মানুষের দ্বৈত আচরণ আমাকে হতাশ করেছে। তারা সামনাসামনি আমার কাজের প্রশংসা করলেও, আড়ালে সমালোচনা করেছে।
কিছু সময় এমনও মনে হয়েছে, আমি হয়তো ভুল পথে চলছি। বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে। এই একাকিত্বের অনুভূতি অনেকবার আমাকে ভেঙে দিয়েছে, কিন্তু সেই মুহূর্তগুলোতেই আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি, কোনো অবস্থাতেই হাল ছাড়ব না।
গণমানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা
রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। গ্রামে মানুষ প্রথমে আমাদের রাজনীতিবিদ হিসেবে গ্রহণ করতে চায়নি। তাদের অনেকেই ভাবত, আমরা শুধু নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করছি।
তবে আমি তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখি। তাদের সমস্যা শুনি, সমাধানের চেষ্টা করি এবং বুঝতে পারি, মানুষের আস্থা অর্জন করতে হলে সময় দিতে হয়। ধীরে ধীরে, তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি, যা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের চাপ
আমার রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে, যেসব কর্মসূচিতে বিএনপি-র সক্রিয় ভূমিকা ছিল, সেখানে পুলিশ আমাদের বাধা দিয়েছে। একবার আমি স্থানীয় একটি বিক্ষোভে অংশ নিই, যেখানে হঠাৎ পুলিশ আমাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
সেদিন আমি গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু দলের সিনিয়রদের সঙ্গে এক হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি। পুলিশি দমন-পীড়ন আমাকে বুঝিয়েছে, রাজনীতির লড়াই শুধু বিরোধী দলের সঙ্গে নয়, কখনো কখনো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধেও হয়।
সফলতা ও অনুপ্রেরণা
এই সমস্ত সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও কিছু সাফল্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। একবার আমরা একটি স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি তহবিল আনতে সক্ষম হই, যা গ্রামের মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন আনে।
সাধারণ মানুষ যখন আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় এবং তাদের জীবনযাত্রায় উন্নতি দেখে আমাদের ধন্যবাদ জানায়, তখন মনে হয়, সব কষ্ট সার্থক।
রাজনীতির এই সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জ আমাকে শিখিয়েছে, জীবনে কিছু পেতে হলে ত্যাগ করতে হয়। আমার বিশ্বাস, মানুষের জন্য কাজ করার এই ইচ্ছা এবং সংগ্রামের এই পথই আমাকে একজন ভালো রাজনীতিবিদ হিসেবে তৈরি করবে।
পঞ্চম অধ্যায়: ব্যক্তিগত জীবন ও আত্মপর্যালোচনা
রাজনীতির ব্যস্ততায় ব্যক্তিগত জীবনের জন্য সময় বের করা সবসময় সহজ ছিল না। তবুও, প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত জীবন, অভিজ্ঞতা, এবং উপলব্ধি—সবকিছু মিলে আমি আজ যে ব্যক্তি, তার ভিত্তি গড়ে উঠেছে। রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত জীবন কখনো একে অপরকে ছাপিয়ে গেছে, আবার কখনো তারা একে অপরের পরিপূরক হয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবন: রাজনীতির বাইরের আমি
রাজনীতির পাশাপাশি আমার একটি সাধারণ জীবনও রয়েছে, যা আমাকে স্বাভাবিক থাকতে সাহায্য করে। আমি একজন সাধারণ গ্রামের ছেলে, যিনি কৃষক পরিবারের সন্তান। রাজনীতি আমার পরিচয়ের একটি বড় অংশ হলেও, এটি আমার একমাত্র পরিচয় নয়।
পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময় আমাকে সবসময় জীবনের বাস্তবতা এবং ভালোবাসার গুরুত্ব শিখিয়েছে। বাবা-মার কঠোর পরিশ্রম, ভাই-বোনদের হাসিখুশি মুহূর্ত এবং গ্রামের সাধারণ পরিবেশ সবসময় আমাকে শিকড়ের কাছে বেঁধে রেখেছে।
রাজনীতির বাইরে আমি বই পড়তে পছন্দ করি। বিশেষ করে ইতিহাস, আত্মজীবনী, এবং সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে লেখা বই আমাকে গভীরভাবে আকর্ষণ করে। এগুলো আমাকে নতুন চিন্তা করতে শেখায় এবং আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
রাজনীতির প্রভাব ও সম্পর্কের পরিবর্তন
রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অনেক পুরোনো বন্ধু আমার রাজনীতির পথে হাঁটার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, আবার কেউ কেউ আমাকে ভুল বুঝেছে।
বেশ কিছু সময় এমন হয়েছে, যখন বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে সমস্যা হয়েছে। অনেকেই মনে করেছে, রাজনীতি আমাকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তবে আমি সবসময় চেষ্টা করেছি, কাছের মানুষদের বোঝাতে যে আমি তাদের জন্যই কাজ করছি।
এখনো আমি বুঝতে পারি, রাজনীতি শুধু একটি পেশা নয়; এটি একটি জীবনধারা। এটি আমার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি কোণাকে স্পর্শ করে এবং আমার সম্পর্কগুলোকে প্রভাবিত করে।
আত্মপর্যালোচনা: নিজের প্রতি ফিরে তাকানো
কিছু সময় এমন হয়েছে, যখন নিজেকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আমি অনেকবার ভেবেছি, এই পথ কি সঠিক? মানুষ কি সত্যিই আমার কাজের মূল্যায়ন করছে?
বিশেষ করে যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল হয়নি বা দলীয় নেতাদের সমালোচনা শুনতে হয়েছে, তখন ভীষণ হতাশা এসেছে। সেই সময়গুলোতে আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছি—আমি কি সঠিকভাবে কাজ করছি?
তবে এই আত্মবিশ্লেষণ আমাকে সবসময় আরও শক্তিশালী করেছে। আমি বুঝেছি, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ভুল থেকে শেখা রাজনীতির একটি অপরিহার্য অংশ। আমার সবকিছুর চেয়েও বড় শিক্ষাটি হলো, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা এবং লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
জীবনের অর্জন ও ব্যর্থতা
আমার জীবনে যত অর্জন এসেছে, তা আমার কঠোর পরিশ্রম এবং দলের প্রতি নিষ্ঠার ফল। একাধিক ছোট ছোট সফলতা, যেমন কোনো স্থানীয় সমস্যার সমাধান করা বা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা, আমাকে গভীর তৃপ্তি দিয়েছে।
তবে ব্যর্থতাও কম ছিল না। কিছু সময় এমন হয়েছে, যখন আমি বড় কোনো লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। এমনকি নিজের দলের ভেতর থেকেও সমালোচনা শুনতে হয়েছে। এসব ব্যর্থতা আমাকে হতাশ করলেও কখনো থামাতে পারেনি।
একবার স্থানীয় একটি প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে আমি আর্থিক এবং দলীয় সমর্থন হারাই। সেই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া বড় লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব।
নিজের প্রতি এবং সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি
আমি সবসময় বিশ্বাস করি, মানুষের জন্য কাজ করাই জীবনের আসল উদ্দেশ্য। রাজনীতির মাধ্যমে আমি সেই সুযোগ পেয়েছি। তবে রাজনীতির বাইরে একজন ব্যক্তি হিসেবে আমার বিশ্বাস, পরিবর্তন শুরু হয় নিজের কাছ থেকে।
নিজেকে প্রতিদিন আরও ভালো করার চেষ্টা করি। আমার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং ব্যর্থতা থেকে শিখে আমি একজন আরও সৎ এবং দক্ষ নেতা হওয়ার চেষ্টা করি।
সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে আমি সবসময় সচেতন। আমি বিশ্বাস করি, শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে মানুষকে পরিবর্তনের বার্তা দিতে হবে। আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো, সমাজকে গড়ে তোলার কাজ সবাই মিলে করতে হবে।
স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের লক্ষ্য
ব্যক্তিগত জীবনে আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো, এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা যেখানে মানুষ তার অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে। আমি চাই, রাজনীতির মাধ্যমে আমি এমন কিছু পরিবর্তন আনতে পারি, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলে।
আমার স্বপ্ন শুধু নেতা হওয়া নয়; আমি চাই, মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে। একজন প্রকৃত জননেতার মতো তাদের পাশে থাকতে।
ব্যক্তিগত জীবন ও আত্মপর্যালোচনা আমাকে শিখিয়েছে যে রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত জীবনকে ভারসাম্য বজায় রেখে চালানো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এই অধ্যায় আমার জীবনের সেই উপলব্ধিগুলোর কথা বলে, যা আমাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেয়।
ষষ্ঠ অধ্যায়: "আমার ফাঁসির ইচ্ছে"
বইয়ের শিরোনাম "আমার ফাঁসির ইচ্ছে" একটি গভীর অর্থবহ এবং শক্তিশালী বার্তা বহন করে। এটি শুধু একটি বাক্য নয়, বরং আমার জীবনের সংগ্রাম, আত্মত্যাগের মনোভাব, এবং একটি আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক। এটি আমার জীবনের সেই অধ্যায়ের কথা বলে, যেখানে নিজের অস্তিত্ব এবং আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য চুকানোর ইচ্ছাও আমি ধারণ করি।
বইয়ের শিরোনামের অর্থ ও তাৎপর্য
"আমার ফাঁসির ইচ্ছে" বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি আত্মত্যাগের সর্বোচ্চ স্তর। এটি আমার জীবন এবং বিশ্বাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমার কাছে ফাঁসি একটি প্রতীক—যে প্রতীকের মাধ্যমে আমি বোঝাতে চাই, সত্য ও ন্যায়ের জন্য আমি সবকিছু ত্যাগ করতেও প্রস্তুত।
এই শিরোনাম আমার সেই আকাঙ্ক্ষার কথা বলে, যেখানে নিজের স্বার্থ, ভয়, এবং জীবনকে পেছনে ফেলে দেশ ও মানুষের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। এটি একটি সাহসিকতার বার্তা—যে সাহস আমাকে বারবার বলে, আদর্শের জন্য জীবন দেওয়া সার্থক হতে পারে, কিন্তু আদর্শ ত্যাগ করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমার জীবনের এমন কোনো ঘটনা বা উপলব্ধি যা আমাকে এই শিরোনাম বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করেছে
আমার জীবনের এমন অনেক ঘটনা আছে, যা আমাকে এই শিরোনামের দিকে টেনে এনেছে। তবে একটি বিশেষ ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
স্থানীয় একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় পুলিশের দমন-পীড়নের শিকার হই। সেদিন তাদের লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাস, এবং হুমকির মধ্যে থেকেও আমরা পিছু হটিনি। আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য সাহসের কী প্রয়োজন। সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল, যদি আদর্শ রক্ষার জন্য জীবন দিতে হয়, তবে তাতেও আমি প্রস্তুত।
এরপর একবার, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমাকে সরাসরি হুমকি দেয়। তারা বলে, “তোমার এই লড়াই যদি চালিয়ে যাও, তাহলে জীবনের জন্য প্রস্তুত থেকো।” সেই রাত আমি নির্ঘুম কাটিয়েছিলাম, কিন্তু ভয় পাইনি। ভেবেছিলাম, সত্যের পথে যদি মৃত্যুও আসে, তবে তা হবে সার্থক।
আরেকটি বিশেষ উপলব্ধি আসে, যখন একজন সাধারণ কৃষক আমাকে বলেন, “তোমরা রাজনীতিবিদরা যদি সত্যিকারের মানুষের জন্য কাজ করতে চাও, তবে তোমাদের নিজেদের স্বার্থ ভুলে যেতে হবে।” এই কথাগুলো আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। সেই মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নিই, নিজের জীবনকে মানুষের কল্যাণের জন্য উৎসর্গ করতে পারলে সেটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।
জীবন-মৃত্যু ও আত্মত্যাগ নিয়ে আমার দর্শন
জীবন-মৃত্যু এবং আত্মত্যাগ সম্পর্কে আমার চিন্তাভাবনা একেবারে সাদামাটা, কিন্তু গভীর। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের জন্ম একটি উদ্দেশ্য নিয়ে, এবং সেই উদ্দেশ্য পূরণ না করে জীবন শেষ হলে সেটি প্রকৃত ব্যর্থতা।
মৃত্যু নিয়ে আমি কখনো ভয় পাইনি। বরং আমি মনে করি, সঠিক সময় এবং সঠিক কারণে মৃত্যু হলে সেটি সবচেয়ে বড় জয় হতে পারে। একজন মানুষের জীবন মূল্যবান, কিন্তু সেই জীবন তখনই সার্থক, যখন তা অন্যের জন্য কিছু রেখে যেতে পারে।
আত্মত্যাগের গুরুত্ব আমি সবসময় উপলব্ধি করেছি। রাজনীতির পথচলায় দেখেছি, কত মানুষ তাদের স্বার্থ ভুলে দেশের জন্য কাজ করেছে। তারা হয়তো ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছু হারিয়েছে, কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করেছে।
আমার দর্শন হলো, মৃত্যুকে ভয় পেয়ে জীবনের সঙ্গে আপস করা কখনোই উচিত নয়। যদি আমার মৃত্যু মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, তবে আমি সেই মৃত্যু গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
আমার এই দর্শনের মূল বার্তা হলো, আত্মত্যাগের মধ্যে নিহিত থাকে চিরন্তন জীবন। একজন মানুষ শুধু তার শারীরিক অস্তিত্বের জন্য বেঁচে থাকে না; তার কাজ, তার আদর্শ, এবং তার অবদান তাকে অমর করে তোলে। আমি বিশ্বাস করি, ফাঁসি আমার শরীরকে শেষ করতে পারে, কিন্তু আমার বিশ্বাস, আদর্শ, এবং কাজের ফল অমর থাকবে।
"আমার ফাঁসির ইচ্ছে" কেন আমার আত্মপরিচয়ের প্রতীক
এই শিরোনাম শুধু আমার একটি ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রকাশ নয়; এটি আমার আদর্শিক অবস্থানেরও প্রতীক। আমি চাই, মানুষ বুঝুক যে আত্মত্যাগ কোনো দুর্বলতা নয়, এটি সাহসের চরম প্রকাশ।
যখন আমি এই শিরোনামটি বেছে নিই, তখন আমার একটাই লক্ষ্য ছিল—মানুষের সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। আমি বলতে চেয়েছি, সঠিক লক্ষ্য এবং আদর্শের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারলে সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মৃত্যু।
আমার এই বইয়ের মাধ্যমে আমি এমন একটি বার্তা দিতে চাই, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। আমি চাই, তারা আমার সংগ্রামের গল্প শুনে তাদের নিজেদের মধ্যে সাহস এবং আত্মত্যাগের মনোভাব গড়ে তুলুক।
শেষ কথা
"আমার ফাঁসির ইচ্ছে" শিরোনামটি আমার জীবনের সমস্ত সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং আদর্শের সারমর্ম। এটি এমন একটি বার্তা, যা আমাকে এবং আমার মতো আরও অনেক মানুষকে জীবনের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সাহায্য করে। আমি বিশ্বাস করি, এই বই শুধু আমার ব্যক্তিগত গল্প নয়; এটি একটি আদর্শ, যা সত্য এবং ন্যায়ের পথে লড়াই করতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।
সপ্তম অধ্যায়: ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি
আমার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাকে শিখিয়েছে, মানুষের জন্য কাজ করাই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। আমার অতীত অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম, এবং উপলব্ধি আমাকে ভবিষ্যতের জন্য একটি স্বচ্ছ লক্ষ্য গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যত আমাদের হাতে তৈরি হয়, এবং আমাদের বর্তমানের কাজই আগামী দিনের দিকনির্দেশনা দেয়।
ভবিষ্যতে আমার পরিকল্পনা
আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেকটাই আমার জীবনের লক্ষ্য এবং দেশের কল্যাণের জন্য নিবেদিত। রাজনীতি আমার জন্য শুধু ক্ষমতা বা পদ পাওয়ার মাধ্যম নয়; এটি একটি হাতিয়ার, যার মাধ্যমে আমি দেশের মানুষের জীবনকে আরও ভালো করার স্বপ্ন দেখি।
১. স্থানীয় উন্নয়ন
আমি আমার নিজ এলাকার জন্য একটি টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে চাই। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা, এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি আমার প্রধান লক্ষ্য।
আমার স্বপ্ন এমন একটি গ্রাম গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার প্রয়োজনীয় সেবা পাবে। তরুণদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে চাই, যাতে তারা দক্ষ হয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।
২. জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা
আমি ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চাই। আমার লক্ষ্য একটি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে জনগণের কথা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে।
আমি এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে প্রত্যেক নাগরিক তার অধিকার ভোগ করতে পারবে। দুর্নীতি, বৈষম্য, এবং শোষণমুক্ত একটি সমাজ গঠনই আমার অন্যতম উদ্দেশ্য।
৩. তরুণদের নেতৃত্বে আনা
তরুণদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি করা আমার পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি চাই, আমাদের তরুণ প্রজন্ম দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে ভূমিকা রাখুক। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকার, এবং সাহসিকতার বীজ বপন করতে চাই।
৪. বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন
একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকরী নেতৃত্ব। আমি চাই, আমাদের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হোক। কৃষি, শিল্প, এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য।
নতুন প্রজন্ম ও রাজনীতির প্রতি আমার বার্তা
তরুণ প্রজন্ম দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি বিশ্বাস করি, তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাগুলোকে জাগ্রত করতে পারলে আমরা একটি সমৃদ্ধ এবং ন্যায়বিচারপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
তরুণদের জন্য বার্তা:
১. শিক্ষার গুরুত্ব:
তরুণদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো নিজেদের শিক্ষিত করা। শিক্ষা শুধু পুঁথিগত জ্ঞান নয়; এটি একটি মানসিক গঠন, যা সত্য এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখায়।
আমি সবসময় বলি, "একজন শিক্ষিত তরুণ একটি সমাজ পরিবর্তন করতে পারে।"
২. নৈতিকতা বজায় রাখা:
রাজনীতি হোক বা অন্য কোনো পেশা, নৈতিকতা হলো প্রতিটি কাজের মূল ভিত্তি। আমি তরুণদের বলতে চাই, কখনোই সৎ পথ থেকে সরে যেও না। সৎ মানুষ সবসময় তার আদর্শের জন্য সম্মানিত হয়।
৩. দেশপ্রেম:
আমাদের তরুণদের মনে রাখতে হবে, তারা এই দেশের ভবিষ্যৎ। দেশকে ভালোবাসা এবং দেশের কল্যাণে কাজ করা তাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
রাজনীতির প্রতি বার্তা:
বর্তমান রাজনীতিতে তরুণদের যুক্ত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি অনেকের কাছে বিতর্কিত মনে হলেও, এটি সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমি চাই, তরুণরা রাজনীতিতে অংশ নিক এবং সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের উদাহরণ তৈরি করুক।
তাদের প্রতি আমার বার্তা, "তোমরা কোনো দলের অন্ধ সমর্থক হয়ো না। সত্যকে বিচার করো, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াও, এবং মানুষের জন্য কাজ করো।"
আমার জীবনের শেষ লক্ষ্য
আমার জীবনের শেষ লক্ষ্য হলো, এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। আমি চাই, আমার জীবন ও কাজ এমন কিছু রেখে যাক, যা মানুষকে দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
আমার লক্ষ্য শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা নয়, বরং এমন একটি সমাজ তৈরি করা, যেখানে সত্য, ন্যায়বিচার, এবং মানুষের কল্যাণ সবচেয়ে বড় গুরুত্ব পায়। আমি চাই, মৃত্যুর পর মানুষ আমাকে একজন আদর্শ নেতা হিসেবে মনে রাখুক, যে শুধু নিজের জন্য নয়, বরং দেশের জন্য বেঁচে ছিল।
আমি বিশ্বাস করি, মানুষের জীবনের প্রকৃত সার্থকতা হলো অন্যের জন্য কিছু করা। আমার কাজ, আদর্শ, এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমি সেই সার্থকতা অর্জন করতে চাই।
আমার স্বপ্ন, আমার জীবন শুধু একটি ব্যক্তিগত গল্প হয়ে থাকবে না; এটি হবে একটি আন্দোলনের প্রতীক। আমি এমন একটি ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে মানুষ একে অপরের জন্য কাজ করবে, যেখানে কোনো অন্যায় থাকবে না, এবং যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার অধিকার নিয়ে বাঁচবে।
"আমার ফাঁসির ইচ্ছে" শুধু একটি শিরোনাম নয়; এটি আমার জীবনের পথচলা, সংগ্রাম, এবং স্বপ্নের সারাংশ। এই বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ে আমার জীবন, দর্শন, এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বর্ণিত হয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি, এই বই শুধু একটি গল্প নয়; এটি একটি অনুপ্রেরণার বার্তা। আমার শেষ অধ্যায়ে আমি আমার জীবনকে ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে যুক্ত করেছি, যা আমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।